Thursday, October 22, 2015

মুক্তির সাথেই থাকুন। সত্যের পথে চলুন। ইতিহাস জানুন। বাংলার ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের করুন ইতিহাস পড়ুন। দেশকে আরো ভালবাসতে শিখবেন।

Mukti Bahini (Bengali: মুক্তিবাহিনী। কি পেলো কি না পেলো তার হিসেব নাই করলাম। জাতিকে কি দিয়েছিল ৭১ এ? সে কথা আগামী প্রজন্ম ভুলে না গেলেই হয়। আমরা আর কয়দিন? আর কোন মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে পাওয়া যাবে না। অনেক নেতা নেত্রী মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির জন্ম হবে এই বাংলায়। শুধু জন্ম হবে না একজন মুক্তিযোদ্ধার।
মুক্তিযোদ্ধারা বৈষম্যের শিকার কেন?
বলা হয়ে থাকে সকল মুক্তিযোদ্ধারাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট সন্তান। তাহলেই সকল মুক্তিযোদ্ধারা জাতিগতভাবেই ভাই ভাই অর্থাৎ জাত ভাই বা যোদ্ধাভাই কারণ সকলের পদবী তারা মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিবাহিনী বা মুক্তিফৌজ "বিচ্ছু"।
জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্রের যদি বৈষম্য না থাকে তাহলে আমরা সকলেই মনুষ্যপ্রাণী। আমরা আল্লাহ্‌ তায়ালার সর্ব শ্রেষ্ট জীব (মানুষ-মান ও হুষ=)মানুষ।
রক্ত মাংস জ্ঞান বুদ্ধি চৈতন্য উপলব্ধি অনুভূতি অতি তীক্ষ্ণ ও সূক্ষ্মভাবে স্নায়ুতন্ত্রের সাথে স্থাপন করেই আদিম রুপে একটি মাক্বলুকাত আল্লাহ্‌ সোবহানাল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছিলেন। বহু জ্ঞানী গুনি ঋষি দার্শনিক সাম্যবাদ মানবতাবাদের বহুবিধ তত্ত্ব, তথ্য ব্যাখ্যা হাজারো ভাবে প্রদান করেছেন। সকলের সকল গবেষণার মুল লক্ষ্য সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। বিধাতাও মনুষ্যজাতির মধ্যে ভেদাভেদ রেখে সৃষ্টি করেন নি, তাই আমরা আশরাফুল মাক্বলুকাত অর্থাৎ আমরাই শ্রেষ্ঠ জীব ।
তো সে শ্রেষ্ট জীব মানব জাতিকে লক্ষ কোটি শ্রেণীতে আমরাই বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছি নিম্নশ্রেণী, নিম্নবিত্ব, মধ্যশ্রেনী-মধ্যবিত্ব উঁচু শ্রেণী উচ্চবিত্ব। আমরাই সৃষ্টি করেছি হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান। আমরাই ধনি গরীবের স্রষ্টা; আমরাই সমাজ ও সমাজপতি; আমরাই ধনি আমরাই গরীব আমরাই শ্রেনীবিভেদের কুঠার আঘাতে মানব সভ্যতাকে করেছি উঁচু নিচু ও মধ্যশ্রেণী বিন্যাস।
যখন রাজনৈতিক নেতাগণ অসহায় নিরীহ ঘর ছাড়া বাস্তহারা জীর্ণ শীর্ণ অথর্ব লাচারের নিকট ভোট ভিক্ষা চাইতে যান, তখন তারা ভুলে যান শ্রেনীবিভেদের অহমিকা ও অহংকারের কথা; তখন বস্তির দুর্গন্ধে তাদের নাগ কারণ ঐ জীর্ণ শীর্ণ অসহায় ব্যক্তিটির একটি মহা মূল্যবান ভোট তাকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে। সে কারণে অনেক লোভনীয় আশ্বাসের বানী শুনিয়ে ঐ অসহায় ব্যক্তিটিকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখান। ঠিক একই ভাবে অনেক রাষ্ট্র প্রধানগণই এই ৩ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও বহু আশ্বাসের বানী শুনিয়ে, মাথায় থ্রি নাট থ্রি বন্দুকের ছবিওয়ালা টুপি পড়িয়ে, এক বেলা বিরিয়ানি খাইয়ে ক্বোরবানীর গরু প্রদর্শনীর মত লঙ মার্চ করতে শের ই বাংলা নগর অথবা বিজয় স্বরনীতে নিয়ে প্রখর রৌদ্রতাপে মগজ ঝলসে দেন। ভূয়সী প্রশংসা করেন; সনদ বিতরণ করেন; স্বর্ণের নামে পিতলের স্ক্রেচ প্রদান করেন; দুই চার হাজার টাকাও দেয়া হয় মাঝে মধ্যে।ধরে নিলাম ওরা চোর লুটেরা জ্ঞানহীন লোভী দুর্বৃত্ত! তাই মন্ত্রী সচিব থেকে শুরু করে আয়োজকের সবাই মুক্তিযোদ্ধা ও বিদেশী সকল মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সৌজন্যে “সন্মান না” প্রদর্শনের নামে লুট পাট করেছে। স্বর্ণ দিয়ে স্ক্রেচ তৈরির নাম করে ৩ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা, জাতিরজনক এবং বিদেশী সমর্থক গোষ্ঠীর সকলকে অপমান ও কলুষিত করেছে। সে বিচার জাতি না হয় নাই চাইলো। আমার এ লেখার প্রসঙ্গ তা’নয়। ক্যাপ্টেন তাজ কি করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কি করেছেন? আমি সেদিকে যাবো না। এমন কি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সহজ সরল বুদ্ধিদীপ্ত গুণীজন “স্বাধীন বাংলা বেতার কাঁপানো”#চরমপত্রের” রচয়িতা এম আর আকতার মুকুল স্যারকে দিয়ে করানো মরহুম ব্রিগেডিয়ার আমিন উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ভুয়া অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী, বি এন পি’র রেদোয়ান আহমেদ বা বর্তমান হেলাল মোরশেদের কথাও বলতে যাবো না। সব দুর্বৃত্তরাই এ ক্ষুদ্রভূমির সম্পদগুলো বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ প্রকল্পের নামে, উন্নয়নের নামে, রাজনীতির নামে, সংস্কারের নামে লুটে পুটে খেয়েছে। তাদের কথা লিখে আবার মামলা খেতে রাজি নই।কিন্তু যে কথাটি বলতে চাই-সে কথাটি বলে কোন পণ্ডিতের অশ্রাব্য গালি খেতে হয় কেই জানে? তবু বলতে হয়; বলতে হবে। না বললে যে আমার উপরই আমি অবিচার করবো।
সম্প্রতি সর্বজনবিদিত প্রকাশ্যে ধূমপানের কারণে বিতর্কিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মাননীয় সাংসদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী মরহুম সইয়েদ মোহসীন আলী ও আমার ভারতে মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষন কালীন ডেপুটি কম্যান্ডার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক স্যারের মৃত্যুতে দেশের প্রধান দুই কর্ণধার কর্তৃক একজনকে মহাসন্মান আর একজনকে রাষ্ট্রীয় অমর্যাদার কারণে আমার বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকা সকল হতাশা আজ আগ্নেয়গিরির অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতই জ্বলে উঠতে চাইছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে কোন একজন ষ্টাফ এ শোকবানী গুলো প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রেরণ করেন। অতি সামান্য কাজ। এ কাজটি করতে কারো অনুমোদনের দরকার হয় না।যদি সমাজকল্যানমন্ত্রী মহোদয় মৃত্যুকালীন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পান, তাহলে অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক স্যার কেন পাবেন না? এক দেশ, একই মুক্তিযুদ্ধের নায়ক, একই যোদ্ধা, একদিনেই মৃত্যুবরন করলেন। মর্যাদার ক্ষেত্রে কেন দুই রকম? এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবেন? মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার জন্য? শুধুমাত্র এম পি মন্ত্রী আর জেনারেলদের জন্য?

ভেবেছিলাম, জীবনে আর কারো বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অপকর্মের বিরুদ্ধে কখনোই লেখা লেখি করবো না। কিন্তু পারলাম না চুপ থাকতে।
আপনারা বড় বড় জ্ঞানি উচ্চ শিক্ষিত কবি সাহিত্যিক অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিক্ষক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার উকিল মোক্তার সবাই আমার চেয়ে অনেক ঢের বেশী বোঝেন। তাই আপনাদের হাতেই দেশ চলছে; উন্নয়ন হচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ধরে নিলাম এই এগিয়ে যাবার পিছনে-আমি হতভাগা মুক্তির বিন্দুমাত্র অবদান নেই। বুঝে নিলাম-আবারো আমি কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হব। তাতে এতটুকুন ভয় নেই আমার।
১৬ কোটী ১০ লক্ষ মানুষই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির দৃষ্টিতে সমান মর্যাদা সম্পন্ন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলে একজন পিতা আর একজন মাতা।
একজন মুক্তিযোদ্ধার মহা প্রয়াণে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শোক বানী মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়; ঠিক পাশাপাশি আর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ শিখিত শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে একটি সংবাদও প্রচার করা হয় না ??????????????????

মুক্তিযোদ্ধা ও সমাজকল্যানমন্ত্রীর জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শোকবানী প্রেরণ করা হয়;


মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মাষ্টার আব্দুর রাজ্জাকের ক্ষেত্রে সেটই হল না কেন? আমি জাতির কাছে জানতে চাই; মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে কৈফিয়ত চাই। জীবিত সকল মুক্তিযোদ্ধাদের জানিয়ে দিন। এই বৈষম্যের কারণেই বাঙ্গালী জাতির প্রানের দাবী ১১ ও ৬ দফা জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রণীত হয়েছিল। এই বৈষম্যের কারণেই পশ্চিমা হায়েনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল।
আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই।
সকল মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয়মর্যাদা সমানভাবে প্রদান না করা হলে ধরে নেবো স্বাধীনতার ফসল ৭০ দশকের হায়েনাদের ঘরে ।


You are my life


You are my heard and


I’d live just for you


I’ll be waiting for you and show you how I feel


You are all my life


Don’t go far


I can give you anything


Just do one thing and hug me so tight.


O my mother land “BANGLADESH”









বঙ্গবন্ধু শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব

parents10
৮ আগস্ট বুধবার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন। ১৯৩০ সালের এ দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে জাতির জনকের হত্যাকারীদের নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। শহীদ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মাত্র তিন বছর বয়সে পিতা ও পাঁচ বছর বয়সে মাতাকে হারান। তাঁর ডাক নাম ছিল রেনু। পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। দাদা শেখ কাসেম চাচাত ভাই শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিবাহ দেন। তখন থেকে বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে শ্বাশুড়ি বঙ্গবন্ধুর মাতা সাহেরা খাতুন নিজের সন্তানদের সঙ্গে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে তিনি প্রাথমিক লেখাপড়া করেন। অতঃপর সামাজিক রীতি-নীতির কারণে গ্রামে গৃহশিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করেন। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তাঁর প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল ও পাঠ্য বইয়ের বাইরে প্রচুর পড়াশোনা করতেন। টুঙ্গীপাড়া গ্রামে শেখ বাড়িতে পরিবারের ছেলেমেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষাদানের জন্য মৌলভী এবং বাংলা, ইংরেজি ও অংক শিক্ষার জন্য গৃহশিক্ষক রাখার রেওয়াজ ছিল। পরিবারের সকল শিশু-কিশোর বিশেষ করে মেয়েরা বাড়িতেই শিক্ষা গ্রহণ করতো।
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের স্মৃতি শক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। মনেপ্রাণে একজন আদর্শ বাঙালি নারী ছিলেন। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, শান্ত, অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে জীবনে যে কোন পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতেন। তাঁর কোন বৈষয়িক চাহিদা ও মোহ ছিল না। স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বাত্মকরণে সহযোগিতা করেছেন।

তিনি ছিলেন অত্যন্ত দানশীল। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ মানুষদের মুক্তহস্তে দান করতেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবরাদি নেওয়া ও পরিবার-পরিজনদের যে কোন সংকটে পাশে দাঁড়াতেন। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে অর্থ সাহায্য করা ও শিক্ষার জন্য সহযোগিতা সবসময়ই করতেন। তাঁর অপত্য স্নেহ, মমতা, দরদ, আপ্যায়নের কথা আজও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা যে যে অবস্থানেই থাকুন না কেন, অকৃত্রিম শ্রদ্ধার সাথে তা স্মরণ করেন। ইতিহাসে তাই বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিনীই নন; বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক স্মরণীয় অনুপ্রেরণাদাত্রী।
034
বঙ্গবন্ধু ব্যস্ত থাকতেন রাজনীতি নিয়ে; সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করা, ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা, লেখাপড়ার সব দায়িত্বই তিনি নিজের হাতে নিয়েছিলেন; আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখের সাথী ছিলেন তিনি। স্বামীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সন্তানদের গড়ে তোলেন। তাঁর কাছ থেকে সহযোগিতা চেয়ে কেউ কখনো রিক্ত হাতে ফিরে যেত না। অনাথ-এতিমদের তিনি সবসময় অপার মাতৃস্নেহে ভালবাসতেন ও সহযোগিতা করতেন।
রাজনৈতিক জীবনের অনেক জটিল সংকট পরিস্থিতিতে স্বামীর পাশে থেকে সৎ পরামর্শ দিতেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করতেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করার পর তদানীন্তন পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেফতারের হুমকি দেয়। বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি পদক্ষেপে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন; ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন স্বামীর আদর্শকে বাস্তবায়ন করবার জন্য; জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন, অনেক কষ্ট, দুর্ভোগ তাঁকে পোহাতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় কারান্তরালে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। তাঁর অবর্তমানে মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দলকে সংগঠিত করতে সহায়তা করা, আন্দোলন পরিচালনায় পরামর্শ দেওয়াসহ প্রতিটি কাজে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় সাক্ষাৎকারের সময় বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে আসতেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সে নির্দেশ জানাতেন, নেপথ্যে থেকে তিনি ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ বাঁচিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। এই সংগঠনের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি অনুপ্রেরণা, শক্তি, সাহস, মনোবল ও প্রেরণা যুগিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হানাদার বাহিনীর চোখ এড়িয়ে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ জামাল, শেখ রাসেল প্রমুখ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অবরুদ্ধ ঢাকা শহরে আত্মগোপন করেন। কিন্তু পাক বাহিনী ক্ষিপ্ত হায়েনার মতো তাঁদের খুঁজে বেড়ায়। এ পাড়া ও পাড়া এবং এ বাড়ি ও বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কিছুদিন থাকলেও শেষাবধি পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দারা তাদেরকে মগবাজারের একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। অতঃপর বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে পরিবারের অপরাপর সদস্যদের সঙ্গে ধানমন্ডির ১৮নং সড়কের একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। চরম মানসিক পীড়ন ও ভয়ঙ্কর পরিবেশ সৃষ্টি করে তাদের ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। কিন্তু স্বামীর বন্দিদশা এবং পাকিস্তানের কারাগারে তাকে হত্যার আশঙ্কা সর্বোপরি নিজেদের বন্দিত্ব ও নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি মুহূর্তের জন্যও ভেঙে পড়েননি; মাথানত করেননি। অসীম মনোবল, সাহস ও ধৈর্য্য নিয়ে তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় এবং পাক বাহিনীর আত্মসমর্পনের পর ১৯৭১-এর ১৭ ডিসেম্বর তাদের বন্দিদশার অবসান ঘটে। কিন্তু তারপরও বিজয়ের আনন্দ তিনি অনুভব করতে পারেননি। অপেক্ষা করতে হয়েছে এবং দেশবাসীকেও ধৈর্য্য ধারণের জন্য পরামর্শ দিতে হয়েছে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডনে যান। সেখান থেকে বেগম মুজিবের সঙ্গে তাঁর প্রথম কথা হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। অবসান ঘটে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার দীর্ঘ প্রতিক্ষার। বাঙালি জাতি ফিরে পায় তাদের অবিংসাদিত প্রিয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। 
bbfamily members
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। তাঁর পাশে থেকে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, সংসার গড়ার পাশাপাশি বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সহযোগিতা করতে সচেষ্ট হলেন বেগম মুজিব। বিশেষ করে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক লাঞ্ছিত মা-বোনকে সহযোগিতা ও তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ব্যক্তিগতভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সান্তনা দেওয়া; সামাজিকভাবে তাদের প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেন। ধীরে ধীরে তিনি অনেক বীরাঙ্গনাকে বিয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন জীবনদান করেন।
এই মহীয়সী নারী জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে দেশ ও জাতির সেবা করে গেছেন। জনগণের জন্য সমগ্র জীবন তিনি অকাতরে দুঃখবরণ করেছেন এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার সময় পরিবারের অপরাপর সদস্যদের সাথে বেগম মুজিবকেও মানবতার শত্রু, ঘৃণ্য ঘাতক, দুশমনের দল নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর আজীবন সুখ-দুঃখের সঙ্গী মৃত্যুকালেও তার সঙ্গী হয়ে রইলেন।
father of the nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman

freedom fighter মুক্তি বাহিনী/মুক্তিফউজ

A freedom fighter is honored in all lands and in all times, because he fights for a noble cause which is the freedom of the motherland. Freedom is  
the birthright of man, but sometimes this right is denied to a nation by foreign rulers. As a result, armed conflict takes places between and if freedom-loving people and the occupation forces. Sometimes the war continues for years and if the people are united and determined then the freedom fighters win and the country achieves independence. The people of Bangladesh fought a glorious war of independence against the Pakistani occupation forces in 1971.
In this Great War the Bangali members of the armed forces the students and the people from all walks of life took part. They fought for long nine months and defeated the well-trained Pakistani forces. Bangladesh became a free country. The people who fought against the Pakistani army and the people who took part in the war effort are called the freedom fighters. Many of the freedom fighters sacrificed their lives for the cause of the motherland. We owe our freedom of these noble freedom sacrificed their lives for the cause of the motherland. We owe our freedom of these noble freedom fighters. The freedom fighters will remain immortal in the history of Bangladesh


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সকল বির্তকের উর্ধ্বে ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সকল বির্তকের উর্ধ্বে ।
আসুন এই অবিনাশী চেতনায় সকলে ঐক্যবদ্ধ হই, রুখে দাড়াই সকল অপকর্ম, দুর্নীতি, কুটকৌশল, কুসংস্কার,
হীন ও দৈন্যতার বিরুদ্ধে,  ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলি সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। রুখে দাড়াই সাম্প্রদায়িক কট্টরপন্থী দুর্বৃত্তের অপকর্মের বিরুদ্ধে। আসুন একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তুলি, যেখানে থাকবেনা দারিদ্র্যতার হিংস্র থাবা, থাকবে না  মঙ্গা মন্দা, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, হিংসা বিদ্বেষ,ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি, পরনিন্দা, পরচর্চার হীন মনোবৃত্তি । থাকবে না ক্ষমতা দখলের জন্যে সেনাবাহিনীর কামানের হুংকার, থাকবে না অস্ত্রের ঝনঝনানি, থাকবে না ক্ষমতার লোভ লালসা, থাকবে না স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে প্রভূর হাতে সমর্পণের হীন চক্রান্ত। থাকবে না ধর্মের নামে জঙ্গিবাদের অবাধ লীলা খেলা। থাকবে না ইসলাম হেফাজতের নামে দুধের শিশুর বুকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মত নির্মম জঘন্য পশু প্রবৃত্তির আস্ফালন। আমরা মাছে ভাতে বাঙ্গালী। আমরা পেট ভরে ভাত খাবো। যার যার ধর্ম কর্ম নিজ নিজ দায়িত্বে শান্তি শৃঙ্খলার সাথে লালন পালন করবো। আগামী প্রজন্মের নাগরিকদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবো। অচিরেই জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত মধ্যম আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ একটি ধনি দেশে উন্নীত হবে ইনশাহ আল্লাহ্‌। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। জয় হোক বাংলার মেহমনি মানুষের। জয় জননেত্রী শেখ হাসিনার জয়।  

পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর কিংবা তাকে লেখা বিভিন্ন জনের বাজেয়াপ্ত করা চিঠিপত্র ...

Last letter of Bangabandhuপাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর কিংবা তাকে লেখা বিভিন্ন জনের বাজেয়াপ্ত করা চিঠিপত্র ... MOKTEL H. MUKTHI·WEDNESDAY, OCTOBER 21, 2015 বঙ্গবন্ধুর শেষ চিঠিঃ the last letter of bangabandhu: http://freedomfighters71.blogspot.com/... পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর কিংবা তাকে লেখা বিভিন্ন জনের বাজেয়াপ্ত করা চিঠিপত্র  
একদিকে যেমন আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক উপাদান, তেমনি আরেকদিকে বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতিকদের জন্য যথেষ্ট শিক্ষণীয়। বিশেষ করে দেশ ও দেশের জনগণকে ভালোবাসলে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, কতটা কষ্টবরণ করতে হয়- সেই শিক্ষা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দিয়ে গেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রের যথেষ্ট গুরুত্ব ও আবেদন রয়েছে। ২০০৮ সালের ফেব্র"য়ারিতে বাংলা একাডেমী থেকে আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র অসাধারণ নেতাই ছিলেন না, ব্যক্তি হিসেবেও তিনি ছিলেন মহান। দেশের জন্য জনগণের জন্য জেলজুলুমের শিকার হয়েছেন, কত ত্যাগ আর কষ্ট করে গেছেন, আজকের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত অনেক নেতার পক্ষেই সেটা কল্পনাতীত। 'বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ'-এর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবন গ্রন্থ প্রণয়নকালে আমরা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল ব্রাঞ্চের দফতর থেকে বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার করি। শেখ মুজিব সংক্রান্ত ওই নথিপত্রের মধ্যে অনেক চিঠি ছিল। বিভিন্নজনকে বঙ্গবন্ধুর লেখা এবং সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে লেখা কিংবা তাকে নিয়ে নানাজনের চিঠিপত্র পাওয়া গেছে সেখানে। পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গোয়েন্দা সংস্থা এসবি ওই সকল চিঠি বাজেয়াপ্ত করেছিল। ১৯৪৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে বঙ্গবন্ধু দু'টি চিঠি লিখেছিলেন। যা হোক, স্পেশাল ব্রাঞ্চের বাজেয়াপ্ত করা চিঠিগুলো থেকে আমরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এমন অনেক কিছু তথ্য পেয়েছি যা এ যাবৎ অজ্ঞাত ছিল আমাদের কাছে; মনে হয় তেমনি বাঙালি জাতির অনেকেরও তা জানা ছিল না। রাজনীতির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি অনেক তথ্যই তাতে উঠে এসেছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে ১৯৫১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে শেখ মুজিব দু'টি চিঠি লেখেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ জেনারেল সেক্রেটারি শামসুল হক এবং সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে। চিঠি দু'টি একই খামে ভরে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু গোয়েন্দারা তা বাজেয়াপ্ত করে। শামসুল হককে লেখা চিঠিতে মুজিব এক জায়গায় বলেছেন,“'... নানা কারণে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়াছি, আমার কোন কিছুর দরকার নাই। যদি ২/১ খানা ভাল ইতিহাস অথবা গল্পের বই পাঠাতে পারেন তবে সুখী হব। বহুদিন মওলানা সাহেবের কোন সংবাদ পাই নাই, এখন কেমন আছেন এবং কোথায় আছেন জানালে সুখী হব। আপনার শরীর কিরূপ, বন্ধু-বান্ধবদের আমার সালাম দিবেন কোন রকম ভয়ের কারণ নাই, তাদের জানাবেন। আমি শীঘ্রই আরোগ্য লাভ করবো বলে আশা করি, বাকি খোদা ভরসা।...'” অন্যদিকে মানিক মিয়াকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, 'শুনে সুখী হবেন, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি কারণ আর কতদিন বাবার পয়সার সর্বনাশ করা যায়। আর শরীরের অবস্থাও
ভাল না। কারণ হঠাৎ ঢাকা জেলে আসার পর থুথুর সাথে পর পর তিনদিন কিছু রক্ত পড়ে, তবে সে রক্ত সর্দি শুকাইয়াও হতে পারে আবার হাঁচি খুব বেশি হয় বলে অনেক সময় গলা থেকেও রক্ত পড়তে পারে। আর কাশের সাথেও হতে পারে, তাই নিজের থেকে হুঁশিয়ার হয়ে যাওয়া ভাল।' একই চিঠিতে বঙ্গবন্ধু আরও লিখেছেন: 'ঢাকা জেলের সুপার সাহেব খুব ভাল ডাক্তার, তাই শীঘ্রই ভাল হয়ে যাবো বলে আশা করি। চিন্তার কোনই কারণ নাই। জেলখানায়ও যদি মরতে হয় তবে মিথ্যার কাছে কোনদিন মাথা নত করবো না। আমি একলা জেলে থাকতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না। কাজ করে যান খোদা নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। আমার জন্য কিছুই পাঠাবেন না। আমার কোন কিছুরই দরকার নাই। নতুন চীনের কিছু বই যদি পাওয়া যায় তবে আমাকে পাঠাবেন। চক্ষু পরীক্ষার পর আপনাকে খবর দিবো। কারণ চশমা কিনতে হইবে। নিজেই দরখাস্ত করে আপনার সাথে দেখা করতে চেষ্টা করব।' শুধুমাত্র জেলবন্দি থাকা অবস্থাতেই নয়, জেলের বাইরে অবস্থানের সময়ও শেখ মুজিবের লেখা অনেক চিঠি স্পেশাল ব্রাঞ্চ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করে। ১৯৫২ সালের ২৮শে মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে শেখ মুজিব দু'টি চিঠি লেখেন ঢাকার হাটখোলা রোডে ঠিকানায় মানিক মিয়াকে এবং পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দারাবাদের ঠিকানায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। ইংরেজিতে লেখা দু'টি চিঠিই গোয়েন্দা পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে। দু'টি চিঠির মাধ্যমে দু'জনকে মুজিব জানিয়েছেন তার শারীরিক অসুস্থতা-বিশেষ করে রক্ত আমাশয়ে (Blood dysentry) আক্রান্ত হওয়ার কথা। ১৬ এপ্রিলের আগেই ঢাকায় রওয়ানা হওয়ার কথা। মানিক মিয়াকে চিঠিতে তার পত্রিকা যে কোন মূল্যে চালিয়ে যাওয়া এবং তার জন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে শেখ মুজিব দলীয় কর্মী ওয়াদুদ (ইত্তেফাকে কর্মরত। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির পিতা) অসুস্থ অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে তার জন্য গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কাছে লেখা চিঠিতে তাকে দেখার অধীর আগ্রহ ব্যক্ত করার পাশাপাশি শেখ মুজিব তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কিত মন্তব্যের সঙ্গে নিজের শারীরিক অবস্থা-বিশেষ করে বিগত আড়াই বছরের
কারারুদ্ধ অবস্থায় তার শরীর ভেঙ্গে পড়ার বিষয়টিও জানিয়েছেন। হাটখোলা রোডে মানিক মিয়ার ঠিকানায় তাকে চিঠি লেখার অনুরোধ জানিয়ে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের মাধ্যমে বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের সালাম জানিয়েছেন শেখ মুজিব। ১৬ এপ্রিলের পূর্বে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগে মানিক মিয়ার একটি চিঠির জবাবে ৬ এপ্রিল মুজিব টুঙ্গিপাড়া থেকে আরেকটি চিঠি লিখেছেন। মানিক মিয়াকে ইংরেজিতে লেখা সে চিঠিটাও গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার ওয়ারী পোস্ট অফিস থেকে জব্দ করে। ওই চিঠিতে বঙ্গবন্ধু ঢাকার মানিক মিয়ার সঙ্গে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কারণ তার অসুস্থ শরীরে হোটেলের খাবার সহ্য হবে না। ওই চিঠি পড়ে জানা যায়, ১৫ এপ্রিল গোপালগঞ্জে তার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় প্রদানের কথা আছে, রায় কী হবে সেটা তিনি জানেন না। তবে যে কোনো পরিস্থিতি বরণ করতে তিনি প্রস্তুত। চিঠিতে শেখ মুজিব বলেন, 'Manik Bhai I can not forget your love and affection (মানিক ভাই, আমি আপনার ভালবাসা এবং স্নেহের কথা বিস্মৃত হতে পারি না।)' বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পথ কুসুমার্স্তীর্ণ ছিল না। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সংগ্রাম করে যে তাকে এগোতে হয়েছে স্পেশাল ব্রাঞ্চের ফাইল থেকে পাওয়া চিঠিপত্রে বর্ণিত বিষয়গুলিই তার সাক্ষ্য। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আর মিথ্যা মামলায় তাকে বার বার জেলে যেতে হয়েছে। তাতে তিনি কাবু হন নি। ১৯৫৮ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজনৈতিক বন্দি থাকা অবস্থায় বাবা শেখ লুৎফর রহমানকে লেখা পুলিশ কর্তৃক বাজেয়াপ্ত এক চিঠিতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, '... মা এবার খুব কষ্ট পেয়েছিল; কারণ এবার তার সামনেই আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। দোয়া করবেন
মিথ্যা মামলায় আমার কিছুই করতে পারবে না। আমাকে ডাকাতি মামলার আসামীও একবার করেছিল। আল্লাহ আছে, সত্যের জয় হবেই। আপনি জানেন, আমার কিছু নাই। দয়া করে ছেলেমেয়েদের দিকে খেয়াল রাখবেন। বাড়ি যেতে বলে দিতাম। কিন্তু ওদের লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যাবে।' আজ নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু পরিবারকেও কম ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়নি। শেষ পর্যন্ত তো জাতির পিতার সঙ্গে সবাই আত্মহুতি দিয়েছেন কেবলমাত্র দুই কন্যা ব্যতীত। এ লেখার প্রতিপাদ্য স্পেশাল ব্রাঞ্চের ফাইল থেকে পাওয়া বঙ্গবন্ধুর বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রের মধ্যেই সীমিত রাখতে চাই। ওই চিঠিপত্রে আমরা দেখতে পাই, গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে পরিবারের সদস্যরা কেবল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গই বঞ্চিত হননি, বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে তাদেরকে ষাটের দশকের গোড়ায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে স্থিতিশীল হওয়ার আগ পর্যন্ত বার বার ঠিকানা বদল করতে হয়েছে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় তখন অনেকেই তাদের বাড়ি ভাড়া দিতেও ইতস্তত করতেন। পঞ্চাশ দশকে জেলের বাইরে অবস্থানের সময় শেখ মুজিবকে একেক সময় একেক ঠিকানা ব্যবহার করতে দেখা গেছে বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রে। অনেক চিঠিতে তিনি আবার তৎকালীন পূর্ব পকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের ৯৮,
নবাবপুর রোডের কার্যালয়ের ঠিকানাও ব্যবহার করেছেন। ১৯৫২ সালের ১৪ জুনে লাহোর থেকে লিখিত সিন্ধু হায়দারাবাদে অবস্থানরত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে লেখা চিঠিতে বঙ্গবন্ধু তার ঠিকানা দিয়েছেন ঢাকার ৭১, রাধিকা মোহন বসাক লেন। ওই চিঠিতে মুজিব তার তৎকালীন নেতা মোহরাওয়ার্দীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, 'Please dont think for me. I have born to suffer. (অনুগ্রহ করে আমার জন্য ভাববেন না, আমার জন্মই হয়েছে কষ্ট ভোগের জন্য)।' ১৯৫৮ সালের ২১ নভেম্বর, ১২ ডিসেম্বর ও ২৩ ডিসেম্বর এবং ১৯৫৯ সালের ৫ই জানুয়ারি, ২৯ জানুয়ারি ও ১৮ ফেব্র"য়ারিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা বন্দি হিসেবে স্ত্রী সন্তান ও আইনজীবীসহ অন্যান্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চেয়ে ডিআইজ, এসবি পূর্ব পাকিস্তান রবাবরে লিখিত আবেদনপত্রসমূহে বঙ্গবন্ধু তার সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছার ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, 'Mrs. Fazilaton Nesa, C/O- Sheikh Mujibur Rahman, in front of Sideshwari High School, Dacca. (মিসেস ফজিলাতুন্নেছা, প্রযতে� শেখ মুজিবুর রহমান, সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, ঢাকা।)' বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রের সূত্রে দেখা যায়, কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়ে শেখ মুজিব ১৯৫৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা পুলিশ সুপারকে জব্দকৃত জীপ ফেরতদানের, ১৯৫৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর লাইসেন্সকৃত বন্ধুক ও পিস্তল ফেরতদানের, ১৯৬০ সালে ১৮ মার্চ জেল থেকে মুক্তি পাবার পর সরকারকে নিজ গতিবিধি সম্পর্কে, ২২ জুলাই ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় রওয়ানা হওয়ার বিষয়ে প্রভৃতি দরখাস্তে বঙ্গবন্ধু তার ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, '76, Segun Bagicha, Ramna, Dacca-2 (৭৬ সেগুনবাগিচা, রমনা, ঢাকা-২)'। আবার গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় যাওয়ার পর ১৯৬২ সালের ৩ এপ্রিল থেকে নিরাপত্তা বন্দি হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আবেদনপত্রে তাদের ঠিকানা হিসেবে '677 Dhanmondi residencial Area, Road No. 32, Dacca (৬৭৭ ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, সড়ক নম্বর ৩২, ঢাকা।)' উল্লেখ করা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্র সূত্রে জানা যায়, জেলখানায় বসেও তিনি অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কারাগারের বাইরে মুক্ত থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক নেতা ও সহকর্মীদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মত বিনিময়ের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ১৯৫২ সালের ২৩ আগস্ট ঢাকার নবাবপুরের আওয়ামী মুসলিম লীগের দফতর থেকে করাচির কূটচেরি রোডে সোহরাওয়ার্দীর ঠিকানায় বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, তার ও আতাউর রহমান খানের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে সফর বিপুল সাড়া জাগালেও সংগঠনের জন্য অর্থের প্রয়োজন। পাটের মূল্য কম থাকায় সাধারণ মানুষ অভাব-অনটনে আছে। তাদের কাছে তহবিলের জন্য আবেদন করা যাবে না। একইভাবে ইত্তেফাক-এর প্রকাশনা অব্যাহত রাখার জন্য আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন বলে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং অভিভাবকতুল্য সহকর্মী তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকেই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক সহকর্মী- এমন কী মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও চিঠি লিখে তাদের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। কারাগারের ভেতর এবং বাইরে থেকে লেখা এ ধরনের চিঠিও তখনকার পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দারা জব্দ করতেও দ্বিধা করেনি। পাকিস্তান সরকারের বাজেয়াপ্ত করা চিঠিপত্র থেকে একটি জিনিস স্পষ্টই বোঝা যায় যে রাজনৈতিক সহকর্মী বা দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অপরিসীম দরদ। অনেক সময় তিনি তাদের পরিবার-পরিজনকে চিঠি লিখে সান্ত্বনা বা সহমর্মিতা জানিয়েছেন। ছাত্রনেতা খালেক নেওয়াজ গ্রেপ্তার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিব ১৯৫২ সালের ৬ জুলাই নববাবপুর রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে খালেক নেওয়াজের মায়ের উদ্দেশ্যে আচারগাঁও, পোস্ট নান্দাইল, ময়মনসিংহের ঠিকানায় একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাতে তিনি বলেন, '... আপনার ছেলে খালেক নেওয়াজ আজ জেলখানায়। এতে দুঃখ না করে গৌরব করাই আপনার কর্তব্য। যদি কোন কিছুর দরকার হয়, তবে আমায় জানাতে ভুলবেন না। আমি আপনার ছেলের মত। খালেক নেওয়াজ ভাল আছে। জেলখানা থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছে। সে মওলানা ভাসানী সাহেবের সাথে আছে।' তেমনি আবার ১৯৬৬ সালের ৪ আগস্টে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বগুড়া জেলা কারাগারে বন্দি নূরুল ইসলাম চৌধুরীকে লিখিত এক চিঠিতে শেখ মুজিব বলেন, 'বোধহয় আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে। ভাবী বুড়া হয়েছেন, বার বার বগুড়া যেতে কষ্ট হয়। কেমন আছেন আমাকে জানালে বাধিত হব। আমি অনেক জেল খেটেছি আমার জন্য ভাববেন না।' বিভিন্ন জনকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিই শুধু নয়, বঙ্গবন্ধুকে লেখা অনেকের চিঠিও পাকিস্তান সরকারের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বাজেয়াপ্ত করেছিল। সে সকল চিঠি থেকে জাতির জনক সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বড় কথা হলো, এসব চিঠিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের আবেগ ও উদ্বেগসহ অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার টান পরিস্ফুট হয়েছে। ১৯৫১ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকার ১৮ নং কারকুন বাড়ি লেন থেকে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মুজিবকে লেখা একটি চিঠিতে বলেন, '.... তোমার মুক্তির জন্য সরকারের দৃষ্টি বহুবার আকর্ষণ করিয়াছি, কিন্তু ছেলে অন্ধ হইলে নাম পদ্মলোচন রাখলে লাভ কি। ধৈর্য ধারণ কর।
আল্লাহ তোমার সঙ্গে আছেন। দেশের মুক্তির সঙ্গে তোমার মুক্তি।' ১৯৫২ সালের ২৯ মার্চ ঢাকা থেকে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া টুঙ্গিপাড়ার ঠিকানায় বঙ্গবন্ধুকে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেন : 'The condition at Dacca is still uncertain. Arrests are continuing. Shamsul Haq has surrendered on 19th. Khaleque Newaz and Aziz Ahmed surrendered on 27th & 28th respectively. There is no information from Moulana Sahib. Long ago we recived communication from him that he was suffering from blood pressure. (ঢাকায় পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত। ধরপাকড় চলছে। শামসুল হক আত্মসমর্পণ করেছেন ১৯ তারিখে। খালেক নওয়াজ এবং আজিজ আহমেদ যথাক্রমে ২৭ ও ২৮ তারিখে আত্মসমর্পণ করেছেন। মওলানা সাহেবের কাছ থেকে অনেক দিন কোন খবর নেই। শুনেছিলাম তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।)' বঙ্গবন্ধুকে লেখা নামজাদা ব্যক্তিবর্গের নয়, মাঠ পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মীর লেখা চিঠিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। শেখ মুজিব যখন আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তখন ঢাকার জিপিও থেকে আটক ও বাজেয়াপ্তকৃত ঢাকার পল্টন হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র আবদুল কাদের মিয়ার চিঠিতে বলা হয়, '... এখন হইতে পত্রিকা ও ২ খানা 'আওয়ামী লীগের' ম্যানিফেস্টো পাঠাইয়া দিলে 'আওয়ামী লীগ' আরেও জনপ্রিয় হইয়া উঠিবে। ইহাই আমার আকুল প্রার্থনা, আপনার নিকট, ভাই সাহেব আপনার সহকর্মীদের কাছে আমার সালাম বলিবেন।' ১৯৫৪ সালের ৮ অক্টোবর গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা বন্দি শেখ মুজিবের ঠিকানায় চিঠি লেখেন জনৈক শহীদ। মুজিবকে 'ভাইজান' বলে সম্বোধন করে ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন,
'... অনেকে কাঁদে, অনেকে দুঃখ করে আর আমাদের অপবাদ দেয়। বলে তোমরা কেন 'তাকে' জেলে রেখে চুপ করে বাইরে আছ। গোপালগঞ্জের মানুষ প্রতিটি মুহুর্তে তারা ফরিয়াদ জানায় আল্লাহর কাছে তাদের প্রিয় নেতার জন্য। কত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আল্লাহর দরবারে ' রোজা নামাজ মানত' করে আপনার মামলার তারিখে।' ১৯৬৬ সালের ১৫ অক্টোবর কুমিল্লার উত্তর চর্থা থেকে মো. আছমত আলী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মুজিবকে এক চিঠিতে বলেন, '... ক্ষুদ্র জীবনে দেশ ও সমাজের জন্য সত্যিকারভাবে 'সেবার' মনোভাব নিয়া যতটুকু কাজ করিতে পারিয়াছি তার জন্য মালিকের দরবারে অশেষ শুকরিয়া আদায় করিতেছি, সত্যিকারের কর্মীরা পদ মর্যাদা ও অর্থ লোভের জন্য রাজনীতি করে না। সেই জন্য তাদের স্ত্রী-পরিবার ঔষধের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। জেলে গেলে এদের পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন স্বযং খোদা। বিশেষ আর কি লিখিব। কায়মনবাক্যে সর্বশক্তিমানের দরবারে আপনার মঙ্গল কামনা করি, দোয়া করিবেন।' মো. আছমত আলীর একই চিঠিতে পুনশ্চ হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শেষ পত্রের দু'টি বাণীর উদ্ধৃতি দেওয়া আছে, (১) কেউ যদি কাজ না করে তবে কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। কেবল জনসভা করাই যথেষ্ট নয়। মুসলিম লীগকে গড়তে কী পরিশ্রম না আমরা করেছি। আজও ঠিক সেইভাবে ব্যাপক খাঁটা-খাটুনির দরকার। (২) .. মনে হয় না, রাজনীতি করার মত মন আমার হবে। আয়কর আর দেনাদায়িক মিটানোর জন্য সব কিছু ছেড়ে আমাকে টাকা আয়ে মন দিতে হবে। দেখ আমরা যারা আগের জমানার নেতা তারা কেবল নিয়মতান্ত্রিক পথেই চলতে জানি কিন্তু তাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। --------------------------------------------------------------------------------------- লিখেছেন : মোনায়েম সরকার , রাজনীতিক ও গবেষক  

যে "ভুলে ভুলুক কোটি মন্বন্তরে, আমি ভুলিবো না, আমি কভু ভুলিবো না"

যে "ভুলে ভুলুক কোটি মন্বন্তরে, আমি ভুলিবো না, আমি কভু ভুলিবো না"
নবজাত স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদানে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করেছিলেন প্রিয়দর্শিনী! মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মননা'য় অভিষিক্ত করে গুরু দায়িত্ব পালন করেছে বাংলাদেশ সরকার । ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে পাকিস্তান সরকারের উপর চাপ প্রয়োগে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে সম্মত করাতে তাঁর অবদান ইতিহাসে রত্নখচিত হয়ে আছে। বিশেষকরে মুক্তিযুদ্ধের অন্তিমলগ্নে ডিসেম্বরে যখন পাকিস্তান বাহিনী অতর্কিতে ভারত আক্রমণ করে তখন থেকে বিজয় অর্জন পর্যন্ত প্রতিটি দিনই ছিল সুকঠিন। সেই সময়ে রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা এবং অসামান্য কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দেন মহাত্মা ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সরকার। ১৯৭১-এর রক্তঝরা সেই দিনগুলোতে ভারত সরকার ও লোকসভার সিদ্ধান্ত, প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা-বিবৃতি এবং ভ্রাতৃপ্রতীম দেশরক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন এসবই এখন ইতিহাসের অংশ। কী ঘটেছিল সেই দিনগুলোতে- ১৯৭১-এর ডিসেম্বরের ৩ তারিখ, পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর চতুর্মুখী গেরিলা আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে উপায়ন্তর না দেখে দিশেহারা হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। বাঙালীর বিজয় যখন আসন্ন, পক্ষান্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরাজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। তখন বাংলাদেশের কাছে পরাজয়ের গ্লানি এড়ানো, ভারতের কাছে পরাজিত হলে যুদ্ধরত পাকিস্তানী সৈন্যরা জেনেভা কনভেনশনের সুযোগ লাভ করবে, সর্বোপরি ভারত সরাসরি এ যুদ্ধে জড়ালে যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদদে জাতিসংঘ এগিয়ে আসবে তাতে হয়ত শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের ঐক্য অটুট রাখা সম্ভবপর হবে। ওইদিন পাকিস্তান বিমানবাহিনী আকস্মিকভাবে পশ্চিম ভারতের বিমান ঘাঁটিগুলোতে তথা শ্রীনগর, অবন্তীপুর, অমৃতসর, ফিরোজপুর, চণ্ডীগড়, ফরিদকোট, পাঠানকোট, সাদেক, ওকহা, জোধপুর ও উত্তরলাই, আম্বালা, এমনকি দিল্লীর সন্নিকটে আগ্রার বিমানক্ষেত্র এবং পূর্ব ফ্রন্টের আগরতলা বিমান ঘাঁটিতে বিনা উস্কানিতে আক্রমণ চালায়। এসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মহীয়সী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী এক সংক্ষিপ্ত সফরে কলকাতায় গড়ের মাঠে বক্তৃতারত অবস্থায় পাকিস্তান কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার সংবাদটি অবহিত হন। কালবিলম্ব না করে তাঁর ভাষণ সংক্ষিপ্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের পরমহিতৈষী সদ্য প্রয়াত শ্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়কে সঙ্গে নিয়ে ওইদিনই রাত ১০-৩০ মিনিটে দিল্লী ফিরে তিনি রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি ভি গিরি ও উর্ধতন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন। 

অতঃপর রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি ভি গিরি ভারতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সঙ্কটজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাত ১২-২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এক বেতার ভাষণে বলেন, "শত্রুরা আমাদের বিমানক্ষেত্রসহ সীমান্ত সন্নিহিত সবগুলো প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর হামলা চালিয়েছে। এরকম সমূহ বিপদের মধ্যেও ভারত যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। বিগত মার্চ মাস থেকেই আমরা একটা ব্যাপক বিপদগ্রস্ত (পূর্ব পাকিস্তানের) জনগণকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি। তাদের দোষ ছিল যে, তারা গণতন্ত্রের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। তাদের সমস্যা আমাদের ছুঁয়েছে, ভাবিয়েছেও বটে। চেষ্টা করেছি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এ সমস্যা সমাধানের। কিন্তু বিশ্ব সভা মূল সমস্যাগুলোকে পাশ কাটিয়ে বাইরের দিকটা সামান্য আলোচনায় এনেছে মাত্র। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই অবস্থার অবনতি ঘটেছে। অসীম সাহসী শৌর্যবান মুক্তিযোদ্ধারা জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধ করে যাচ্ছে দেশপ্রেমের উন্মাদনায়। আমরা তাদের সম্মান করি। আজ এই যুদ্ধ ভারতের যুদ্ধ হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করলো। এর দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে আমার
ওপর, আমার সরকারের ওপর এবং সর্বোপরি ভারতের সমস্ত জনগণের ওপর। যুদ্ধের তাণ্ডব থেকে আমাদের আর পেছনে ফেরার কোন উপায় নেই। আমাদের দেশপ্রেমিক মানবতাবাদী যোদ্ধা জওয়ানরা দেশের প্রতিরক্ষার জন্য এগিয়ে চলেছে। সারা ভারতে ঘোষণা করা হয়েছে জরুরী অবস্থা এবং এর সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।" বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের গণতন্ত্রের পক্ষে ভোট প্রদান এবং জীবনবাজি রেখে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী এ যুদ্ধকে ভারতের যুদ্ধ হিসেবেও আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন। এমন সহমর্মী সমবেদনা প্রকাশ এবং অপর দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে নিজ দেশের স্কন্ধে তুলে নেয়ার মহত্ত্ব সচরাচর দৃষ্ট নয়। কেবলমাত্র আদর্শিক ও নৈতিক বন্ধনই পারে এরূপভাবে একাত্ম হতে। প্রদত্ত ভাষণে তিনি আন্তরিকতার সঙ্গেই বলেন, "বিপদগ্রস্ত (পূর্ব পাকিস্তানের) জনগণকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি" এবং "তাদের সমস্যা আমাদের ছুঁয়েছে, ভাবিয়েছেও বটে। চেষ্টা করেছি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এ সমস্যা সমাধানের"- এ কথাটি নিছক কথার কথা নয়। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী সারা বিশ্ব ঘুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলেছিলেন। এর পরদিন অর্থাৎ ৪ ডিসেম্বর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের যৌথ দস্তখতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়। ওই পত্রের মূল বক্তব্য ছিল, "আমরা গভীর বেদনার সাথে লক্ষ্য করছি, গত ৩ ডিসেম্বর মধ্যাহ্নে পাকিস্তান সামরিক জান্তা কাপুরুষোচিতভাবে আপনার দেশ আক্রমণ করেছে। এহিয়া খানের সর্বশেষ এই অপরিণামদর্শী অপকর্ম সুস্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির লঙ্ঘন যা চূড়ান্তভাবে এটাই প্রমাণ করে যে, তার লক্ষ্য হচ্ছে উপমহাদেশের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে স্নায়ুবিক চাপ, ধ্বংস এবং আর্থসামাজিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করা। 

পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের এবংবিধ নগ্ন অভিলাষ সম্পর্কে বাংলাদেশের জনগণ সচেতন এবং ৯ মাসের কিছু আগেই তারা এর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের সূচনা করেছিল। ইতোপূর্বে ১৫ অক্টোবর এবং ২৩ নবেম্বর পাকিস্তান সামরিক জান্তার সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতির বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়েছিলাম যতক্ষণ না পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে দখলদার বাহিনীর পূর্ণাঙ্গ পরাজয় সুনিশ্চিত হচ্ছে ততক্ষণ লক্ষ্য পূরণে আমরা অবিচল থাকব। আপনার দেশের ওপর এহিয়া এবং তদীয়
দোসর জেনারেলগণ কর্তৃক সম্পাদিত আগ্রাসন মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগ্রাসীদের বিতাড়নে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে সযত্নে লালিত আমাদের ঐক্যবদ্ধ ও সাধারণ মূল্যবোধ অনুযায়ী চালিত হবে। ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী, ডিসেম্বরের ৩ তারিখ আপনার দেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কর্তৃক সম্পাদিত নগ্ন আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানী আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী যে কোন সেক্টরে বা যে কোন ফ্রন্টে যুদ্ধে সদা প্রস্তুত। বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষণটি ভারত সরকারের কর্মে শুরু থেকেই প্রতিফলিত। ১৯৭১-এর মার্চের ২৫ তারিখ রাত ১১-৩০ মিনিটে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী কর্তৃক পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যার নীলনকশানুযায়ী অপারেশন সার্চলাইট শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই অনিবার্য হয়ে উঠেছিল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার। আর সেই আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার্থে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কালবিলম্ব করেননি বরং গণহত্যা শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই পূর্ব প্রস্তুতি মোতাবেক সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পরমাকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করে বলেছিলেন, "আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন ...!" জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার মুখনিঃসৃত এই আমোঘ বাণী নব উদ্ভূত "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের" রাজনৈতিক বৈধতা অর্জনের নৈতিক ভিত্তি যুগিয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছিল নিয়মতান্ত্রিক বৈধতা। স্বাধীনতা ঘোষণার এই নিয়মানুগ বৈধতার বলে বলীয়ান হয়ে নবীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভবে মুক্তিযুদ্ধের পরম মিত্র ভারতবর্ষের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল মার্চের ৩১ তারিখে অর্থাৎ স্বাধীনতা ঘোষণার মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধে লোকসভায় সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব গ্রহণ করে সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে এটা তুলে ধরা যে, স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ন্যায্য ও বৈধ। সর্বসম্মতভাবে গৃহীত এই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল- 

"(১) পূর্ব বাংলার সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে এই সভা গভীর উদ্বেগ ও সমবেদনা প্রকাশ করছে। পূর্ব বাংলার সমগ্র জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা ও আবেগ দমন করবার উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তান হতে আমদানি করা সৈন্যবাহিনীর সাহায্যে প্রচণ্ড আক্রমণ করা হয়েছে। (২) ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় নির্বাচনে সেখানকার জনগণ যে অভ্রান্ত রায় দিয়েছে, তাকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার পরিবর্তে পাকিস্তান সরকার জনগণের সেই নির্ভুল অভিমতকে অগ্রাহ্য করার পথ বেছে নিয়েছে। (৩) পাকিস্তান সরকার আইনসম্মত উপায়ে জনগণের প্রতিনিধিবৃন্দের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে কেবলমাত্র অস্বীকার করেন নাই, বরং জাতীয় পরিষদকে তার ন্যায়সঙ্গত তথা সার্বভৌম অধিকার গ্রহণে অন্যায়ভাবে বাধা দিয়েছেন। বেয়নেট, মেশিনগান, ট্যাঙ্ক, বিমান বহর ও ভারি গোলাগুলি প্রভৃতি দিয়ে বর্বরোচিত নগ্ন আক্রমণের দ্বারা পূর্ববঙ্গের জনগণকে অবদমিত করার চেষ্টা চলছে। (৪) ভারতীয় জনসাধারণ এবং সরকার
সর্বদাই পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ, স্বাভাবিক ও ভ্রাতৃসুলভ সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা করছে। ভারতের অবস্থান এবং এই
উপমহাদেশের জনগণের শতাব্দীব্যাপী ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যগত বন্ধনের দৃষ্টিতে এই সভা আমাদের সীমান্তের এত সন্নিকটে অনুষ্ঠিত জঘন্য অত্যাচারের প্রতি উদাসীন থাকতে পারে না। একটি নিরস্ত্র এবং নির্দোষ জনগণের উপর এরূপ এক অমানুষিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের সর্বত্র জনগণ নিঃসংশয়ে ধিক্কার দিয়েছে। (৫) পূর্ববঙ্গের জনগণের গণতান্ত্রিক জীবনধারণের এই সংগ্রামের প্রতি এই সভা গভীর সমবেদনা ও সংহতি জ্ঞাপন করছে। (৬) শান্তি এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রতি ভারতের যে চিরস্থায়ী আগ্রহ রয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই সভা অবিলম্বে সকল প্রকার শক্তির প্রয়োগ ও নিরস্ত্র জনতার নির্বিচার হত্যা বন্ধের জন্য দাবি জানাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার কাজকে, যা গণহত্যার সমতুল্য, অবিলম্বে বন্ধের জন্য পাকিস্তান সরকারের ওপর প্রভাব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই সভা বিশ্বের সকল সরকারের এবং জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। (৭) এই সভা গভীর প্রত্যয় ব্যক্ত করছে যে, পূর্ববঙ্গের সাড়ে সাত কোটি জনগণের এই ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান জয়যুক্ত হবে। এই সভা এই আশ্বাস দিচ্ছে যে, ভারতীয় জনগণের পূর্ণ সহযোগিতা ও সমবেদনা তাঁরা তাঁদের এই ত্যাগ ও সংগ্রামের পিছনে লাভ করবেন।" বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান উপলক্ষে ভারতীয় লোকসভার যুক্ত অধিবেশনে প্রদত্ত ঐতিহাসিক বক্তৃতায় শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, "বাংলাদেশ 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ' নামে অভিহিত হবে। এই সভা নিশ্চয়ই চায় যে, আমি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁদের অন্যান্য সহকর্মীদের নিকট আমাদের ঐকান্তিক সংবর্ধনা ও আন্তরিক অভিনন্দন পৌঁছে দেই।

 ... বাংলাদেশের জনগণ বিরাট বাধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ... বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার এবং জনগণ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য যে একসাথে কাজ করেছে তা সৎ প্রতিবেশীসুলভ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ... একমাত্র এরূপ একটি নীতিই এতদঞ্চলে শান্তি, স্থায়িত্ব ও প্রগতির পথ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ... বাংলাদেশ সরকার ভারতে আগত শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবর্তনের এবং তাদের জমি-জমা ও জিনিসপত্র ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য পুনরায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। ভারত স্বাভাবিকভাবেই এই প্রচেষ্টা কার্যকর করার ব্যাপারে সর্বতোভাবে সাহায্য করবে।" লোকসভার সকল সদস্যবৃন্দ দাঁড়িয়ে তুমুল হর্ষধ্বনির মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক ঘোষণাকে অভিনন্দন জানান। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শুরু থেকে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন পর্যন্ত ভারত সরকার ও জনসাধারণ, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। দীর্ঘ ২৬ বছরের সেনা শাসনে মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার জোড়কলম বানাবার হীন ও ষাড়যন্ত্রিক অপচেষ্টায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন ভূলুন্ঠিত করবার নিরন্তর চেষ্টা হয়েছিল। তথাপি সেনাশাসক ও রাজাকারেরা সে চেষ্টায় সফলকাম হতে পারেনি। 
 যুদ্ধোত্তর কালে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের পক্ষে ভারতবর্ষ ও ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকাকে আমরা যতই প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাই না কেন তা ধোপে টিকেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে যে দেশটি তার বিপুল দরিদ্র জনসাধারণের ভার বহনে অক্ষম হয়েও নবজাত স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদানে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করেছিল; পরম শ্রদ্ধা আর বিনম্রচিত্তে আমাদের জাতীয় ইতিহাসে তা রত্নখচিত হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ৩,৬৩০ জন ভারতীয় সৈনিক আত্মদান করে, ২৩০ জন নিখোঁজ এবং ৯,৮৫৬ জন সৈনিক আহত হয়। ভিন জাতির এসব বীর সৈনিকদের সুমহান ত্যাগের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা না জানিয়ে, কৃতজ্ঞচিত্তে তাঁদের স্মরণ না করে ইতোমধ্যে অকৃতজ্ঞতার নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আমরা যথেষ্ট স্থাপন করেছি। এক্ষণে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার মহিয়সী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত করবার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। নিঃসন্দেহে এই মহতী উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বিগত দিনের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। writen by Abul Khayer

জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে, তোমাদের কোন শক্তি নেই তা' নির্ধারণের।


১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি যেদিন মাদারীপুর কালকিনি থানার আড়িয়াল খাঁ নদী দিয়ে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের খাসের হাটের পাশ ঘেঁসে খান সেনাদের গানবোট অতিক্রম করছিল, ঠিক সে মুহূর্তে খাসের হাটে খবর এলো মিলিটারি আসছে, পালাও। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা সিদ্ধান্ত নিলো"বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মত তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শ্ত্রুর মোকাবিলা করতে হবে" আমরা তাই করলাম, শর্কি ঢাল, বল্লম রামদা ট্যাঁটা ইত্যাদি নিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদীর দিকে ছুটতে শুরু করলাম। নদীর তীরে যেয়ে অপেক্ষা করছি । দেখা গেল একটি অতি পুরাতন গমবাহী কার্গো মাদারীপুরের দিকে যাচ্ছে। তাও থামানো হল। চেক করা হল, দেখা গেল কিছুই নয়। 

গল্পটি এ কারণেই বলছি যে আমাদের বিশেষ করে পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী বীর বাঙ্গালীর দুঃসাহসিক মনোবল এত দৃঢ় যে বাঙ্গালী জাতিকে হারানোর কারো শক্তি নেই বা ছিল না; কাজেই ভয় দেখিও না; মুক্তিরা মরে না; অমর হয় আর জীবন একটাই সেটা না হয় দেশ ও জাতির জন্য উৎসর্গ করে গেলাম।


হুমকি ধামকির দিন শেষ। যুদ্ধে নেমেছ, হয় মরবে না হয় মারবে। জয় হবে একজনের। যুদ্ধের ময়দান থেকে পালাবার কোন পথ থাকে না। ৭১ এ যুদ্ধে নেমেছি, আজো সে যুদ্ধ চলছে। চলবে যতদিন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বাংলার মাটিতে লুকিয়ে থাকবে। দেশ প্রেমের কথা স্বয়ং দ্বীনের নবী মহা নবী (সঃ) ও বহুভাবে উল্লেখ করেছেন। দেশের জন্য, দেশের পবিত্র মাটির জন্য, বাংলার দুখি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য যারা কাজ করে; তারা গাঁট বেধেই মাঠে নামে। ভয় ভীতি প্রদর্শন, হামলা হত্যা, জ্বালাও পোড়াও কোন রাজনৈতিক দলের মূল আদর্শ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হতে পারে না। আওয়ামী লীগ জ্বালাও পোড়াও রোধে কঠোরতা অবলম্বন করেছে, দমনও করেছে। জাতির উন্নয়ন, জনগণের সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তার জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে; স্বাধীনতা ও সার্বভৌম রক্ষার প্রশ্নে কোন আপোষ নেই; নীতির সাথে দুর্নীতির যেমন কোন আপোষ মীমাংসা হয় না; তেমনি স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথেও আপোষ হওয়া যায় না। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটাই আমার শেষ কথা। আর জীবন ? ওটাতো আল্লাহ্‌ রাব্বুল আল আমীন আমার জন্মের সাথেই লিখে দিয়েছেন। যেদিন মৃত্যু হবে, বিশ্ব ভ্রমান্ডের কোন বৃহৎ শক্তি নেই মৃত্যুকে রোধ করে। আল্লাহ্‌ মহান ও সর্বশক্তিমান। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

Wednesday, October 21, 2015

নতুন প্রজন্মকে সুন্দর ও সফল ভবিষ্যৎ উপহার দেয়ার অঙ্গীকার: নির্বাচনী ইস্তেহারে জননেত্রী শেখ হাসিনা

২০২১ সালের মধ্যে আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দ্রব্যমূল্য হ্রাস ও মহামন্দা রোধ, দুনীতি দমন,জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে আওয়ামী লীগ দিন বদলের সনদ নামে ২৩ দফা নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে৷ ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস কঠোর হস্তে দমন করার অঙ্গিকার করা হয়েছে৷ ২০২১ সালকে টার্গেট করে আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে৷ এ প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১৩ সালে অর্থাৎ ৪ বছরের মধ্যে দেশকে পুনরায় খাদ্যে আত্মনির্ভরশীল করা, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা, বেকারত্বের হার ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, আগামী ৫ বছরে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ৪৫ শতাংশ থেকে ২৫-এ নামিয়ে আনা, ৱাতক পর্যন্ত শিক্ষাকে সবার জন্য অবৈতনিক করা, দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট ও ভাতের অধিকার দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার-এই শ্লোগানের ভিত্তিতে রচিত এ ইশতেহার ভিশন-২০২১ নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণী যারা প্রথম ভোটার হয়েছেন তাদেরকে উৎসর্গ করেন৷
ইশতেহারে গভীর সংকট থেকে দেশকে উদ্ধার করে ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে উন্নয়ন,গণতন্ত্র, শান্তি ও প্রগতির পথে এগিয়ে নেয়ার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করা হয়৷ চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, দ্রব্য মূল্য সন্ত্রাসী সিণ্ডিকেট ভেঙে দেয়া, বিশ্ব-মন্দা মোকাবিলায় টাস্ক ফোর্স গঠন এবং তথ্য বিশ্লেষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার কথা ইশতেহারে বলা হয়েছে৷
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে৷ আরও বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হবে ২০ হাজার মেগাওয়াট৷ ৩ বছর মেয়াদি ক্র্যাস প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে ২০১৩ সালের মধ্যে ৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০১৫ সালের মধ্যে ৮ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে৷ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করাসহ বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা,সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মানবাধিকার, আইনের শাসন ও নাগরিক মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করা হবে৷ শিক্ষা,বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা, নতুন শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করে শিক্ষা-ব্যবস্থা আধুনিক, ২০১৩ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা এবং ২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করা হবে৷ ঢাকায় আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর,পদ্মা সেতু নির্মাণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সড়ক,রেল ও নৌ পথের আধুনিকায়ন করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে৷ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতি সত্তা ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করা হবে৷ সার্ক, বিমসটেকসহ আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং ইসলামিক উম্মাহর সংহতি ও ইসলামি দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা উন্নততর করা হবে৷ সমমর্যাদার ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’-এই নীতির ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হবে৷
সমগ্র জাতির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ইশতেহার বাস্তবায়ন করে নতুন প্রজন্মকে সুন্দর ও সফল ভবিষ্যৎ উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করেন শেখ হাসিনা